1) প্রাথমিক (Primary) ও গৌণ ( Secondary) লিম্ফয়েড অঙ্গ বলতে কি বোঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যেখানে লিম্ফসাইটের উৎপত্তি, পূর্ণতাপ্রাপ্তি এবং সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে, সেই অঙ্গকে লিম্ফয়েড অঙ্গ বলে। লিম্ফয়েড অঙ্গ দুই প্রকার প্রাথমিক এবং গৌণ।
প্রাথমিক লিম্ফয়েড অঙ্গ- যেসব লিম্ফয়েড অঙ্গে লিম্ফোসাইটের উৎপত্তি ও বিভেদন ঘটে তাকে প্রাথমিক লিম্ফয়েড অঙ্গ বলা হয়। যেমন, থাইমাস এবং অস্থিমজ্জা ।
গৌণ লিম্ফয়েড অঙ্গ- যেসব অঙ্গে পরিণত লিম্ফোসাইট বর্তমান থাকে এবং বিভিন্ন এন্টিজেনের সঙ্গে তাদের আন্তক্রিয়া ঘটে সেসব অঙ্গকে গৌণ লিম্ফয়েড অঙ্গ বলে। যেমন, প্লীহা (spleen), লসিকা গ্রন্থি, টনসিল , MALT ইত্যাদি।
2) অর্জিত অনাক্রম্যতা কী ও কয় প্রকার? এদের সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ। / আমাদের দেহে কিভাবে অর্জিত অনাক্রম্যতা গড়ে উঠে?
উত্তরঃ আমাদের দেহে কোনো জীবাণু প্রবেশের পরেই অর্জিত (Adaptive) অনাক্রম্যতা গড়ে উঠে। এই প্রক্রিয়ায় লিম্ফোসাইট বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। B-লিম্ফোসাইটের প্রভাবে যে অনাক্রম্যতা সৃষ্টি হয় তাকে রস নির্ভর (Humoral) এবং T-লিম্ফোসাইটের সাহায্যে সৃষ্ট অনাক্রম্যতাকে কোশ নির্ভর (cell mediated) অনাক্রম্যতা বলা হয়।
রস নির্ভর- এই প্রক্রিয়ায় দেহে প্রবিষ্ট অক্ষত জীবাণুর সঙ্গে নির্দিষ্ট B-লিম্ফোসাইট তাদের কোশপর্দা স্থিত 'Y' আকৃতির গ্রাহকের সাহায্যে সংযুক্ত ও উদ্দীপিত হয়ে ক্রম বিভাজনের দ্বারা প্লাজমা ও মেমোরি কোশ সৃষ্টি করে। প্লাজমা কোশগুলি ঐ জীবাণুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন এন্টিবডি যথা, IgA, IgM ইত্যাদি প্রস্তুতিতে সক্ষম। পরবর্তীতে উৎপন্ন এন্টিবডিগুলি রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে বাহিত হয়ে জীবাণুকে ধ্বংস করে। এই কারণে এই অনাক্রম্যতাকে রস নির্ভর বা হিউমোরাল অনাক্রম্যতা বলা হয়।
কোশ নির্ভর- T- কোশগুলি সরাসরি জীবাণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। কোনো আক্রান্ত কোশ অথবা আগ্রাসী (phagocytic) কোশস্থিত নির্দিষ্ট জীবাণুর এন্টিজেন খণ্ডক গুলি বিশেষ উপায়ে MHC প্রোটিনের দ্বারা কোশ পর্দায় প্রদর্শিত হলে T- লিম্ফোসাইট 'I' আকৃতির গ্রাহকের সাহায্যে যুক্ত হয়। সাইটোটক্সিক T কোশ এভাবে কোনো এন্টিজেনের সঙ্গে সংযুক্ত হলে এর পারফরিন এনং গ্র্যানজাইম ক্ষরণের মাধ্যমে জীবাণু সমন্বিত আক্রান্ত কোশের ধ্বংস ঘটায়।
3) ম্যালেরিয়া পরজীবিটির নাম কী? সংক্ষেপে পরজীবিটির মনুষ্য চক্র বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ম্যালেরিয়া পরজীবিটির না হল Plasmodium vivax
মানুষের দেহে পরজীবিটির অযৌন দশা সম্পন্ন হওয়ায় মানুষ Plasmodium এর গৌণ পোষক। নিম্নলিখিত ভাবে পরজীবিটির মনুষ্য চক্র সংঘটিত হয়,
i) প্লাসমোডিয়াম আক্রান্ত মশকি কোনো মানুষকে কামড়ালে তাদের লালা গ্রন্থি থেকে প্লাসমোডিয়ামের স্পোরজয়েট দশাগুলি মানুষের রক্তে প্রবেশ করে।
ii) রক্ত থেকে স্পোরজয়েটগুলি যকৃতের (liver) কোশে যায় এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে গোলাকার সাইজন্ট-এ পরিণত হয় যাদের ক্রিপ্টোজয়েট বলে। এগুলি পুনরায় বিভাজিত হয়ে ক্রিপ্টোমেরোজয়েটে রূপান্তরিত হয়।
iii) ক্রিপ্টোমেরোজয়েটেগুলি লিভার কোশ থেকে রক্তে মুক্ত হয় এবং RBC তে ইনভ্যাজিনেশন পদ্ধতিতে প্রবেশ করে ও RBC- অভ্যন্তরে এরা মেটা-ক্রিপ্টোজয়েটে রূপান্তরিত হয়। মেটা-ক্রিপ্টোজয়েটগুলি বিভাজিত হয়ে মেটা-ক্রিপ্টমেরোজয়েটের উৎপত্তি ঘটে।
iv) RBC-র মধ্যে এগুলি গোলাকার ট্রোফজয়েটে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ট্রোফজয়েটের নিউক্লিয়াসটি বার বার বিভাজিত হয়ে বহু নিউক্লিয়াস যুক্ত সাইজন্ট-এর উৎপত্তি ঘটে। এই নিউক্লিয়াস গুলি থেকে মেরোজয়েটের সৃষ্টি হয় এবং RBC-র লাইসিসের মাধ্যমে এরা প্লাজমায় বেরিয়ে আসে।
v) এই মেরোজয়েটেগুলি নতুন এরিথ্রোসাইট (RBC) আক্রমণ করেস এবং এভাবে চক্র চলতেই থাকে। কিছু মেরোজয়েটে RBC-তে প্রবেশের পর পুনরায় মেরোজয়েটে সৃষ্টি না করে গোলাকার গ্যামেটোসাইটে রূপান্তরিত হয়। কোনো মশকি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পান করলে গ্যামেটোসাইটগুলি মশকির দেহে প্রবেশ করে এবং মশকি চক্রের সূচনা ঘটে।
0 Comments